কাঁদো ব্রাজিল কাঁদো-
চোখের জলের নাকি কোনো রঙ হয় না। যদি বলা হয় সেই রঙ হলুদ, খুব কি বেশি বাড়িয়ে বলা হবে! অন্তত ব্রাজিল সমর্থকদের কাছে তা নয়। গতরাতে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারাটা কি শুধুই পরাজয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল?
ক্রীড়া প্রতিবেদক
চোখের জলের নাকি কোনো রঙ হয় না। যদি বলা হয় সেই রঙ হলুদ, খুব কি বেশি বাড়িয়ে বলা হবে! অন্তত ব্রাজিল সমর্থকদের কাছে তা নয়। গতরাতে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারাটা কি শুধুই পরাজয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল? নাকি তার চেয়েও বেশি। ব্রাজিল ফুটবলের জাত্যাভিমানকে ধুলোয় মিশিয়ে জার্মানি যে আঘাত হানল, তা সুনামির চেয়েও কোনো অংশে কম নয়। ব্রাজিল ফুটবলের ঐতিহ্য আর গৌরব কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই যেন হাওয়ায় মিলে গেল। শতবর্ষীয় নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে এত বড় ব্যবধানে কখনও হারেনি ব্রাজিল, যা গতকাল জার্মানির কাছে লজ্জাজনক পরিণতির মাধ্যমে রচিত হলো বেলো হরাইজন্তের এস্টাডিও মিনেইরো স্টেডিয়ামে। আর এক যুগ পর ফাইনালে নাম লেখাল জার্মানি।
এক নেইমার না থাকায় এতটা বিবর্ণ ব্রাজিল! আক্রমণে ধার নেই। এক থিয়াগো সিলভা না থাকায় রক্ষণেও কোনো শক্তি নেই! তাই বলে ৬ মিনিটের ব্যবধানে ৪ গোল! স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি ব্রাজিলিয়ানরা। দু'জন খেলোয়াড় না থাকলেও তো দলটির নাম ব্রাজিল। কিন্তু এতটা বাজে অবস্থা? বেলো হরাইজন্তে সেমিফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি হয়ে আধঘণ্টা না যেতেই হজম করে ফেলল ৫ গোল। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, জার্মানদের আক্রমণ ঠেকাতেই বেসামাল হয়ে গেল ব্রাজিলিয়ানরা। একের পর এক গোলে গ্যালারিতে উঠল কান্নার রোল। বজ্রপাতের মতো ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ভ হয়ে গেল ব্রাজিলের ২০ কোটি মানুষ।
অথচ, ম্যাচ শুরুর আগে ব্রাজিল কতটা একতাবদ্ধ সেটা বোঝা গিয়েছিল জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় নেইমারের জার্সি হাতে ডেভিড লুইজ আর গোলরক্ষক হুলিও সিজারের আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণায়। গ্যালারিতে হোর্ডিং কার্ডে হাজার হাজার নেইমার। উচ্চৈস্বরে ৫৭ হাজার ব্রাজিলিয়ানের জাতীয় সঙ্গীতে মনে হয়েছিল, জার্মানির পরাজয় তখনই সূচিত হয়ে যাবে। কিন্তু খেলা শুরু হতে না হতেই পাল্টে গেল মাঠের চিত্র। শুরুর ২ মিনিট ব্রাজিলের নিয়ন্ত্রণেই ছিল খেলা। যেই না জার্মানির পায়ে বল গেল, তখনই শুরু ব্রাজিলের হতাশা। একের পর এক আক্রমণে ১১ মিনিটেই কর্নার আদায় করে নেয় জার্মানি। টনি ত্রুক্রজের কর্নার কিকের সময়ই বোঝা গেল থিয়াগো সিলভার অভাব। সেন্টার বক্সে একেবারে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা থমাস মুলারের পায়ে বল আসতেই আলতো করে ব্রাজিলের জালে জড়িয়ে দিলেন তিনি। সেই শুরু। এর পর একের পর এক ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে গেল জার্মানরা। ১১ থেকে দ্বিতীয় গোল দিতে সময় লেগেছিল ১২ মিনিট। ২৩ মিনিটে জার্মানদের সম্মিলিত আক্রমণ থেকে গোল করলেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। ব্রাজিলের বিপক্ষে ব্রাজিলের মাটিতেই তাদের গ্রেট রোনালদোর বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৫ গোলের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে ১৬ গোল করে নতুন রেকর্ড গড়ে ফেললেন ক্লোসা। অথচ ওই গোলটিতে প্রথমবার শট নিলে গোলরক্ষক হুলিও সিজার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সহজ বলটি যদি সিজার হাতের মধ্যেই রাখতে পারতেন তাহলে ক্লোসা গোল পেতেন না; কিন্তু ফিরতি বলেই তিনি পা ছোঁয়ান এবং দ্বিতীয় গোল হজম করে ব্রাজিল। ২৪ মিনিটে তৃতীয় গোল! এবার গোলদাতা টনি ত্রুক্রজ। ব্রাজিলের রক্ষণভাগ যে কতটা নড়বড়ে, এ গোলেই তার প্রমাণ। রক্ষণভাগের দুর্বলতা পুরো কাজে লাগিয়ে ফিলিপ লাম চিপ করেন বক্সে। বক্সের বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে যান টনি ত্রুক্রজ এবং বাঁ পায়ের শটে ফাঁকা পোস্টে বল জড়ান তিনি। এক মিনিট পর (২৬ মিনিটে) আবারও টনি ত্রুক্রজের গোল। ব্রাজিলের ডিফেন্স যে পুরোপুরি অকার্যকর, সেটা বোঝা গেল এবার। বাঁ পাশ থেকে স্যামি খেদিরা বল এগিয়ে দিতেই ডান পায়ে শট নেন টনি ত্রুক্রজ। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্স গোল রক্ষার কোনো সুযোগই পায়নি। ২৯ মিনিটে পঞ্চম গোল। এবার গোলদাতা স্যামি খেদিরা। মেসুত ওজিলের কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে ডান পায়ে শট করেন খেদিরা। ডেভিড লুইজ, দান্তে কিংবা মার্সেলোরা বার বার শুধু তাকিয়ে দেখছেন কীভাবে গোল হচ্ছে; কিন্তু গোল রক্ষার কোনো সুযোগই পাচ্ছেন না। আর গোলরক্ষক হুলিও সিজার অসহায়ের মতো এদিক-সেদিক লাফাচ্ছিলেন। কিন্তু দুর্দান্ত হয়ে ওঠা জার্মানদের সামনে কিছুই করতে পারছিলেন না।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মুহুর্মুহু আক্রমণে জার্মানির ডিফেন্স ব্যস্ত করে তুলেছিল ব্রাজিল। কিন্তু ৬৯ মিনিটে পরিবর্তিত খেলোয়াড় আন্দ্রে শুরেল করেন ষষ্ঠ গোল। ৭৯ মিনিটে সেই শুরেলই দলের হয়ে সপ্তম গোল করেন। অবশেষে সব হারিয়ে ৯০ মিনিটে অস্কার ব্রাজিলের হয়ে একটি গোল পরিশোধ করেন।
Created at 2014-07-08 14:42
Back to posts
UNDER MAINTENANCE